শিল্প সংশ্লিষ্টরা ইউএনবিকে জানান, বর্তমানে দেশে বছরে প্রায় ১০ লাখ মেট্রিক টন এলপিজি খরচ হয়, ২০০৯ সালে যা ছিল ৪৭ হাজার মেট্রিক টন এবং ২০২৫ সাল নাগাদ তা পৌঁছানোর কথা ২৫ লাখ মেট্রিক টনে।
এলপিজি ব্যবসায়ীরা বর্তমানে সিঙ্গাপুর বা নিকটতম অন্যান্য গভীর সমুদ্র বন্দর যেখানে বড় জাহাজ নোঙ্গর করা হয়, সেখান থেকে ছোট ও মাঝারি আকারের জাহাজের মাধ্যমে তরলীকৃত গ্যাস আমদানি করেন।
তবে মাতারবাড়ী গভীর সমুদ্র বন্দর চালু হয়ে গেলে, বড় জাহাজগুলো সরাসরি সেখানে নোঙ্গর করতে পারবে এবং প্রতি মেট্রিক টনে ৩৫-৪০ ডলার ব্যয় হ্রাস পাবে বলে জানিয়েছেন বিপিসির কর্মকর্তারা।
আরও পড়ুন: মাতারবাড়ী বিদ্যুৎকেন্দ্র চালুর জন্য প্রস্তুত হতে পারে ২০২৩ সালে
নাম প্রকাশ না করার শর্তে বিপিসির একজন কর্মকর্তা বলেন, ‘এ কারণেই এলপিজির তৃতীয় টার্মিনাল বাস্তবায়ন অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ কারণ ক্রমবর্ধমান ব্যবহারের চাহিদার প্রেক্ষাপটে পেট্রোলিয়াম গ্যাস আমদানি প্রতি বছর ১০-১৪ শতাংশ বৃদ্ধি পাচ্ছে।’
বিপিসি ইতোমধ্যে এলপিজি টার্মিনাল প্রকল্পের জন্য সম্ভাব্যতা যাচাইয়ে সমীক্ষা পরিচালনার পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে উল্লেখ করে এই কর্মকর্তা আরও বলেন, ‘প্রকল্পের সম্ভাব্যতা যাচাইয়ে সমীক্ষা পরিচালনা এবং এ সংক্রান্ত প্রতিবেদন জমা দেয়ার জন্য পরামর্শদাতা নিযুক্ত করতে আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলোর কাছ থেকে এক্সপ্রেশন অব ইন্টারেস্ট (ইওআই) চেয়ে দরপত্র আহ্বান করতে আমরা প্রস্তুত রয়েছি।’
সূত্রগুলো জানিয়েছে, দুটি জাপানি সংস্থার নেতৃত্বে আন্তর্জাতিক তিনটি কনসোর্টিয়াম ইতোমধ্যে কাজের আগ্রহ প্রকাশ করে বিপিসি ও জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ বিভাগের কাছে পৃথক প্রস্তাব জমা দিয়েছে।
একটি কনসোর্টিয়ামের নেতৃত্বে রয়েছে জাপানের সংস্থা মিতসুই অ্যান্ড কোম্পানি লিমিটেড, যেখানে সহযোগী হিসেবে রয়েছে কোরিয়ান সংস্থা এসকে গ্যাস এবং ইস্ট কোস্ট গ্রুপ। অন্য দুটি কনসোর্টিয়ামের মধ্যে একটি জাপানি সংস্থা মারুবেনি করপোরেশনের নেতৃত্বে এবং অন্যটির নেতৃত্বে রয়েছে সুমিতোমো করপোরেশন।
নেদারল্যান্ডস ভিত্তিক ভিটল এনার্জি মারুবেনি নেতৃত্বাধীন কনসোর্টিয়ামের অংশ এবং চুঙ্গকো ইলেকট্রিক পাওয়ার সুমিতোমো করপোরেশনের অংশীদার।
মিতসুই গ্রুপ জাপানের বৃহত্তম ব্যবসায়িক গোষ্ঠী যারা বিশ্বব্যাপী জ্বালানি এবং অবকাঠামোগত ব্যবসা করে, এস কে গ্রুপ দক্ষিণ কোরিয়ার তৃতীয় বৃহত্তম ব্যবসায়িক গোষ্ঠী যাদের গভীর সমুদ্রে এলপিজি টার্মিনাল এবং ভিএলজিসির মতো বড় এলপিজি ক্যারিয়ারের মালিকানা রয়েছে। এছাড়া স্থানীয় পার্টনার হিসেবে যুক্ত হওয়া এই অঞ্চলের বৃহত্তম এলপিজি অপারেটর ইস্ট কোস্ট গ্রুপের বাংলাদেশে এলপিজিসহ ডাউন স্ট্রিম পেট্রোলিয়াম খাতে প্রায় ৩৫ বছরের অভিজ্ঞতা রয়েছে।
সংশ্লিষ্ট সূত্রের তথ্য অনুযায়ী, বাংলাদেশের বিদ্যুৎ খাতে মারুবেনি ও সুমিতোমোর বিনিয়োগ রয়েছে। আর নেদারল্যান্ডসভিত্তিক সংস্থা ভিটল গত ৩-৪ বছর ধরে বাংলাদেশে বাল্ক এলপিজি সরবরাহে নিযুক্ত রয়েছে।
আরও পড়ুন: এগিয়ে চলছে মাতারবাড়ী বন্দরের নির্মাণ কাজ
এদিকে, এ বিষয়ে পরবর্তী নির্দেশনা চেয়ে বিপিসির পক্ষে কনসোর্টিয়ামের তিনটি প্রস্তাব প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে (পিএমও) পাঠিয়েছে জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ বিভাগ।
তবে কোনো সিদ্ধান্ত নেয়ার পরিবর্তে পিএমও বিপিসিকে তাদের প্রস্তাবগুলো মূল্যায়ন এবং সংশ্লিষ্ট কাজে অভিজ্ঞতার ভিত্তিতে আগ্রহী সংস্থাগুলোর মূল্যায়ন প্রতিবেদন পাঠাতে বলেছে বলে জানা গেছে।
‘বর্তমানে এই বিষয়ে মূল্যায়নের কোনো মানদণ্ড না থাকায়’ বিপিসি কাজটি করতে কিছু দিন সময় নিতে পারে বলে জানিয়েছে সূত্রগুলো।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক বিপিসির এক শীর্ষ কর্মকর্তা বলেন, ‘তাদের প্রস্তাবগুলো মূল্যায়নের জন্য আমাদের কিছু মানদণ্ড নির্ধারণ করতে হবে এবং এরপরেই আমরা তাদের মূল্যায়ন করতে সক্ষম হব।’